জানতে হবে - জানাতে হবে

ডায়াবেটিস

  • ডায়াবেটিস শরীরের একটি বিপাকজনিত সমস্যা, যেখানে রক্তের  গ্লুকোজ স্থায়ীভাবে বেড়ে যায়।
  • ডায়াবেটিসের পূর্বাবস্থাকে প্রি-ডায়াবেটিস বলে।
  • বংশগত বা/এবং পারিপার্শ্বিক কারণে ইনসুলিন নামক হরমোনের নিঃসরণ কমে গেলে বা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে বা এ দুয়ের মিলিত প্রভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
  • ইনসুলিন শরীরের অগ্ন্যাশয় নামক একটি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন। ইনসুলিন রক্তনালী থেকে গ্লুকোজকে দেহকোষে প্রবেশে সাহায্য করে থাকে। দেহকোষের বা শরীরের সকল কাজের জন্য এই গ্লুকোজ প্রয়োজন।
  • ডায়াবেটিস প্রধানত চার ধরনের – টাইপ-১, টাইপ-২, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস।
  • টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলে অগ্ন্যাশয় একদম ইনসুলিন নিঃসরণ করে না।
  • টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে ইনসুলিন প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে এবং একই সাথে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যায় ।
  • পরিবর্তনযোগ্য নয় এমন ঝুঁকিসমূহ হচ্ছে: বয়স বেশি হলে, যাদের বংশে বিশেষ করে, বাবা-মা, ভাই-বোনের ডায়াবেটিস আছে ।
  • পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকিসমূহ হচ্ছে: যাদের ওজন স্বাভাবিকের থেকে বেশি, যারা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না, যারা অতিমাত্রায় ফাস্টফুড খান বা কোমল পানীয় পান করেন, মহিলাদের মধ্যে যাদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ছিল, যাদের প্রি-ডায়াবেটিস আছে।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, ঘন ঘন পিপাসা পাওয়া, ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা, ওজন কমে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা । 
  • ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। 

ডায়াবেটিস সনাক্তকরণ পরীক্ষা :

১. খালি পেটে রক্ত পরীক্ষা 

২. র‌্যান্ডম রক্ত পরীক্ষা

৩. ওজিটিটি পরীক্ষা (একমাত্র ওজিটিটি পরীক্ষার মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা এবং ডায়াবেটিস ও প্রি-ডায়াবেটিস সনাক্ত করা যায়)

১. প্রথমে সকালে খালি পেটে রক্ত পরীক্ষা (যা হতে হবে রাতের খাবারের ৮-১৪ ঘন্টার মধ্যে)। 

২. ২য় বার ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ ২৫০-৩০০ মিলিলিটার পানিতে গুলিয়ে খাবার ২ ঘন্টা পর রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

গ্লুকোজ খবার পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে ২ ঘন্টা পর্যন্ত অবশ্যই বসে থাকতে হবে। এ সময় কোন ধরণের খাবার ও পানীয় গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে)

  • ওজিটিটি পরীক্ষায় খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৬.১ মিলিমোল/লিটার এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে গ্লুকোজের মাত্রা ৭.৮ মিলিমোল/লিটার এর নিচে হলে তাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। 
  • যদি গ্লুকোজের মাত্রা খালি পেটে ৭ মিলিমোল/লিটার বা এর বেশি অথবা গ্লুকোজ খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ১১.১ মিলিমোল/লিটার বা এর বেশি হয় তখন তাকে ডায়াবেটিস বলা হয়। 
  • এছাড়া স্বাভাবিক মাত্রা এবং ডায়াবেটিসের মাঝামাঝি অবস্থাকে প্রি ডায়াবেটিস বলা হ
  • ডায়াবেটিস এর  দীর্ঘমেয়াদী জটিলতাসমূহ হলঃ  

    হৃদরোগ, কিডনি বিকল হওয়া, স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত, অন্ধত্ব, ও পা কেটে ফেলা। 

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ সেবন করুন ও নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
  • পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করা।

ডায়াবেটিসে ৭ টি করণীয়

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অর্থাৎ সঠিক খাদ্যাভ্যাস শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ৬০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়।

  • ক্রটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসই পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ অসুখের মূল কারণ। 
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসব্জি, ফলমূল এবং পরিমিত পরিমান শর্করা আমিষ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সেই সাথে বর্জন করতে হবে ক্যালরীবহুল চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় এবং চিনি মিষ্ঠিজাতীয় খাবার।
  • বিশ্বব্যাপী জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে জন শারীরিকভাবে যথেষ্ঠ সক্রিয় নয়। 
  • বিশ্বব্যাপী ৮০ শতাংশ কিশোর কিশোরী শারীরিকভাবে সক্রিয় নয়। 
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রতিদিন দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটতে হবে।
  • বিশ্বব্যাপী ৫০ শতাংশের অধিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ওজনাধিক্য স্থুলতায় আক্রান্ত। 
  • টাইপ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশ স্থুলকায়।
  • ওজনাধিক্য স্থুলতা প্রতিরোধে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসব্জি, ফলমূল খাবার পাশাপাশি শিম, শস্যজাতীয় এবং বাদামজাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। সেই সাথে বর্জন করতে হবে চর্বিযুক্ত, চিনি মিষ্ঠিজাতীয় খাবার। 
  • ওজনাধিক্য স্থুলতা প্রতিরোধে দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি শিশুকিশোরদের প্রতিদিন ৬০ মিনিট প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটতে হবে।
  • ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিই জানেন না তার ডায়াবেটিস আছে।
  • ওজিটিটি পরীক্ষায় যদি খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজ  . মিলিমোল/লি এর সমান বা বেশী হয় এবং/ অথবা গ্লুকোজের শরবত খাওয়ানোর ঘন্টা পর ১১. মিলিমোল/লি এর সমান বা বেশী হয় তাহলে ডায়াবেটিস হয়েছে ধরতে হবে।
  • বর্তমানে প্রতি জন মহিলার মধ্যে একজন গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। 
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের পরবর্তী গর্ভধারণের সময়ে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দেয়। 
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশের পরবর্তীকালে টাইপ ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি থাকে।
  • ওজিটিটি পরীক্ষায় যদি খালি পেটে রক্তের গ্লুকোজ . মিলিমোল/লি এর সমান বা বেশী হয় এবং/ অথবা গ্লুকোজের শরবত খাওয়ানোর ঘন্টা পর . মিলিমোল/লি এর সমান বা বেশী হয় তাহলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়েছে ধরতে হবে।    
  • গর্ভধারণপূর্ব সেবা গ্রহণের মাধ্যমে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস পরবর্তীকালে টাইপ ডায়াবেটিস এর পাশাপাশি অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই গর্ভধারণে সক্ষম সকল নারীর (১৮ থেকে ৪৫ বছর) অতি দ্রুত গর্ভধারণপূর্ব সেবা গ্রহণের মাধ্যমে তার শারীরিক ঝুঁকিগুলো জেনে নেয়া উচিত। 
  • বর্তমানে দেশব্যাপী বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির ৫৪টি সেন্টারে মাত্র ৬০০ টাকায়  ”গর্ভধারণপূর্ব সেবাপ্যাকেজের মাধ্যমে এই সেবা দেয়া হয়ে থাকে।   
  • ডায়াবেটিসে পক্ষাঘাতের (স্ট্রোক) ঝুঁকি গুণ, হৃদরোগের ঝুঁকি গুণ, অন্ধত্বের ঝুঁকি ২৫ গুণ, কিডনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি গুণ এবং পা কেটে ফেলার ঝুঁকি ২০ গুণ বৃদ্ধি পায়। 
  • হিমোগ্লোবিন  এ১সি % কমাতে পারলে ডায়াবেটিসজনিত মৃত্যু ২১%, ছোট রক্তনালীর (মাইক্রোভ্যাসকুলার) জটিলতা ৩৭% এবং বড় রক্তনালীর (ম্যাক্রোভ্যাসকুলার) জটিলতা ১৪% কমে যায়।
  • ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা খালি পেটে/ খাবার আগে মিলিমোল/লি এর নিচে, খাবার ঘন্টা পর ১০. মিলিমোল/লি এর নিচে এবং হিমোগ্লোবিন  এ১সি % এর নিচে রাখতে হবে। 
  • গর্ভকালীন সময় সকল রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা খালি পেটে/ খাবার আগে . মিলিমোল/লি এর নীচে এবং খাবার ঘন্টা পর . মিলিমোল/লি এর নীচে রাখতে হবে। 
  • ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা, ওজন রক্তচাপ মেপে দেখার পাশাপাশি বছরে কমপক্ষে একবার চোখ, দাঁত, পা, হার্ট, কিডনি, লিভার এবং রক্তে চর্বির মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শমতো পরীক্ষা করে দেখতে হবে।  
  • ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তচাপ ১৩০/৮০ এর নিচে, কোলেস্টরলের মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম/ডিএল এর নিচে, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ১৫০ মিলিগ্রাম/ডিএল এর নিচে, এলডিএল এর মাত্রা ১০০ মিলিগ্রাম/ডিএল এর নিচে, এইচডিএল এর মাত্রা পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ মিলিগ্রাম/ডিএল এর উপরে মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫০ মিলিগ্রাম/ডিএল এর উপরে রাখতে হবে। 
  • ধুমপানের অভ্যাস অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ

  • সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার মার্কারির কম এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মার্কারির কম।
  • সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০-১৩৯ মিলিমিটার মার্কারি অথবা ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০-৮৯ মিলিমিটার মার্কারি । এই ধরণের রোগীদের ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
  • পূর্ণ বয়স্কদের ক্ষেত্রে সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মিলিমিটার মার্কারি বা তার ওপরে অথবা ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মিলিমিটার মার্কারি বা তার ওপরে হলে উচ্চ রক্তচাপ ধরা হয়ে থাকে।
  • পরিবর্তনযোগ্য নয় এমন ঝুঁকিসমূহ হচ্ছে- বেশি বয়স , বংশে উচ্চ রক্তচাপ থাকা। 
  • পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকিসমূহ- খাবারে অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার, ওজনাধিক্য বা স্থুলতা, শারীরিক পরিশ্রম না করা, ধূমপান ও তামাকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা, মানসিক চাপ, গর্ভাবস্থা।
  • মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, ঝাপসা দেখা, অবসাদগ্রস্থ। 
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে
  • স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত, হৃদরোগ, রেটিনায় সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি) ও অন্ধত্ব, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া।
  • পরিমিত পরিমাণে সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, ধূমপান ও তামাক সেবন না করা, পাতে লবণ পরিহার করা, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করা।
Open chat
কোভিড ১৯ ও ডায়াবেটিস সম্পর্কিত অনলাইন সেবা