নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কিত মিথ / বিভ্রান্তকর তথ্য

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএস সিডিসি

  • না। শরীরে মিথানল, ইথানল ও ব্লিচ লাগালে কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় না। মিথানল, ইথানল ও ব্লিচ হল বিষ। মিথানল, ইথানল ও ব্লিচ কখনো কখনো পরিষ্কার করার দ্রব্যে ব্যবহার করা হয়  যাতে তা যেকোনো উপরিতলের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে । তবে এগুলো কখনোই আপনার শরীরে ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলো আপনার শরীরের ভিতরে থাকা ভাইরাস ধ্বংস করবে না, বরং আপনার অভ্যন্তরীণ অঙ্গেও ক্ষতিসাধন করবে।
  • অ্যালকোহল গ্রহণ করলে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় না এবং এটির ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে রসুন কার্যকর এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, রসুন একটি উপকারি খাবার, যার কিছু জীবাণুনাশক গুনাগুণ থাকতে পারে।
  • স্যুপ ও খাবারে বেশি করে মরিচ দিয়ে খেলে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরের জন্য উপকারী কিন্তু পর্যাপ্ত গরম পানি পান করলে ও গরম পানি দিয়ে গোসল করলে তা কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয় না। 
  • না। স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার করলে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব- এমন কোন নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দেখা গেছে, স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার করলে সাধারণ ঠান্ডা থেকে দ্রুত উপশম হয়। কিন্তু এর ফলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রামণ প্রতিরোধ হয় তা জানা যায়নি।
  • গৃহপালিত পশু/পাখির মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অসুস্থ পশু/পাখির সংর্স্পশ এড়িয়ে চলা উচিত। 
  • মশা ও মাছির মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়ায় এমন কোনো তথ্য/ প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
  • আক্রান্ত রোগীর স্পর্শ করা (চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি), তার ব্যবহৃত (কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে), বা পরিচর্যায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র (মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু, স্টেথোস্কোপ, ব্লাড প্রেশার মেশিন, থার্মোমিটার ইত্যাদি) তাৎক্ষনিকভাবে খালি হাতে স্পর্শ বা ধরলে তার মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) যে কোন জিনিসের উপর বেশ কয়েক ঘন্টা জীবিত থাকতে পারে।

ভালো ভাবে হাত ধুয়ে টাকা পয়সার মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়ানের ঝুঁকি কম। নিজের সুরক্ষার জন্য দুই হাত বারে বারে সাবান-পনি দিয়ে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। তবে, করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শে জিনিসপত্র দূষিত হতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, নভেল করোনাভাইরাস যে কোন জিনিসের উপর বেশ কয়েক ঘন্টা জীবিত থাকতে পারে।

  • কোভিড-১৯ ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ার দেশের পাশাপাশি উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার দেশেও বিস্তার লাভ করেছে। যেখানেই থাকুন, যে অবহাওয়াই থাকুক না কেনো, সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বারবার হাত ধুয়ে ফেলুন, সর্দি-কাশির সময় টিসু পেপার দিয়ে অথবা কনুই ভাজ করে নাক-মুখ ঢেকে ফেলুন এবং ব্যবহৃত টিস্যুটি ঢাকনা যুক্ত বিনে ফেলুন।
  • কোভিড-১৯ এর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো শুঁকনো কাশি, ক্লান্তি ও জ্বর। কিছু মানুষের মধ্যে রোগটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া হওয়া। আপনার কোভিড-১৯ হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করার সর্বোত্তম উপায় হলো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা। আপনি শ্বাস প্রশ্বাস ব্যায়াম দিয়ে তা নিশ্চিত করতে পারবেন না, বরং এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
  • কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ঘন ঘন দুই হাত সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড যাবৎ পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষ করে খাওয়ার আগে, বাথরুম ব্যবহার করার পরে এবং হাঁচি, কাশি দেয়া বা জনসমক্ষে থাকার পর।
  • না, হ্যান্ড ড্রায়ার নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ধ্বংসে কার্যকরী নয়। নিজের সুরক্ষার জন্য দুই হাত বার বার সাবান ও পানি দিয়ে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। হাত পরিষ্কারের পর টিস্যু দিয়ে হাত মুছে ফেলুন। 
  • না, এখনো পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা বা প্রতিরোধে কার্যকরী কোন ঔষধ নেই। কিন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গ উপশমের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা এবং গুরুতর অসুস্থদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারে। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা পরীক্ষাধীন, যা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এর মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ এই সংক্রান্ত গবেষণা ত্বরান্বিত করার জন্য সহযোগীতা করছে।
  • না, অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাস-এর বিরুদ্ধে নয়, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কর্যকরী। নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এক ধরনের ভাইরাস বিধায় এর চিকিৎসায় বা প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিৎ নয়। তবে কেউ যদি করোনাভাইরাস দিয়ে আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তিনি ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সহ-সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়েটিক পেতে পারেন। 
  • কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বাসার দরজা জানলা বন্ধ না করে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের সুব্যবস্থা করতে হবে। 
  • না, কোভিড-১৯ জনিত রোগ নিউমোনিয়া ভ্যাকসিনের কোন ভ‚মিকা নেই। করোনাভাইরাস সম্পূর্ন নতুন হওয়ায় এর জন্য আলাদা ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় গবেষকরা এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজ হচ্ছে। 
  • ধুমপান কোভিড-১৯ সংক্রমণে কোনো সুরক্ষা দেয় না। ধুমপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর। প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মানুষ ধুমপানের জন্য মৃত্যুবরণ করে। ধূমপানের ফলে বা যাদের আগে থেকে কোন অসুস্থতা আছে যেমন-হৃদরোগ, এমন ব্যক্তির গুরুতর কোভিড-১৯ হবার ঝুঁকি বেশি।
  • কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বাজার থেকে আনা শাক-সবজি, ফলমূল ও অন্যান্য সামগ্রী জীবানুনাশক দিয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে এমন কোনো তথ্য/ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জীবাণুনাশক ব্যবহারের ফলে শারীরিক ক্ষতি তৈরী হতে পারে। তবে বাইরে থেকে আনা শাক-সবজি, ফলমূল অবশ্যই ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তবে শাক-সবজি, ফলমূল পানি দিয়ে পরিষ্কার করার আগে ও পরে অবশ্যই দুই হাত সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড যাবৎ পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • যে কোনো বয়সের ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারে। বয়স্ক এবং যাদের আগে থেকে কোন অসুস্থতা আছে (এজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ), এমন ব্যক্তির গুরুতর অসুস্থ হবার ঝুঁকি বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব বয়সী মানুষকে এই ভাইরাস থেকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা মেনে চলার উপদেশ দিয়েছে। 
  • ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খুব সহজেই যেমন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারে তেমনি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রোগটি খুব দ্রুত জটিল আকার ধারণ করতে পারে। 
  • ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির যদি মৃদু ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি খালি পেটে ৪.৪-৬.১ এবং খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে যদি ৬.১-৭.৮ থাকে তাহলে পূর্বের নিয়মে ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হবে। 
  • আক্রান্ত ব্যক্তির যদি মাঝারি নিউমোনিয়া এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি খালি পেটে ৬.১-৭.৮ এবং খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে ৭.৮-১০.০ থাকে তাহলে ডায়াবেটিসের মুখে খাবার ওষুধ বন্ধ করে চামড়ার নিচে ইনসুলিন নিতে হবে। 
  • আর আক্রান্ত ব্যক্তির যদি জটিল ধরনের নিউমোনিয়া, সেপসিস, এআরডিএস, সেপটিক শক দেখা দেয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭.৮-১০ থাকে তাহলে আইভি বা শিরায় ইনসুলিন নিতে হবে।
  • ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির যদি মৃদু ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি খালি পেটে ৪.৪-৬.১ এবং খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে যদি ৬.১-৭.৮ থাকে তাহলে পূর্বের নিয়মে ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হবে। 
  • আক্রান্ত ব্যক্তির যদি মাঝারি নিউমোনিয়া এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি খালি পেটে ৬.১-৭.৮ এবং খাওয়ার ২ ঘন্টা পরে ৭.৮-১০.০ থাকে তাহলে ডায়াবেটিসের মুখে খাবার ওষুধ বন্ধ করে চামড়ার নিচে ইনসুলিন নিতে হবে। 
  • সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে ব্যয়াম করা যাবে না। অসুস্থ অবস্থায় শরীরে বিশেষ কিছু হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গিয়ে শারীরিক ঝুঁকি তৈরী করে থাকে। তাই, শুধুমাত্র কোভিড-১৯ নয়, যে কোন কারণে অসুস্থ হলে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করে ডায়াবেটিস রোগীদের বিশ্রামে থাকতে হবে। 
  • অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কোভিড-১৯ জনিত জটিলতা বেশি দেখা যায়। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করতে হবে। 

    এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসারে, উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ বিশেষ করে এসিই-ইনহিবিটর (র‌্যামিপ্রিল, পেরিন্ডেপ্রিল, ইরালাপ্রিল) ও এআরবি  (লোসার্টান, অলমিসার্টান, টেলমিসার্টান, ভালসার্টান) জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে কোন বাধা নেই।

Open chat
কোভিড ১৯ ও ডায়াবেটিস সম্পর্কিত অনলাইন সেবা